বাংলাদেশ থেকে ভিজিট ভিসায় থাইল্যান্ড যাওয়ার উপায়
ভ্রমণপিপাসু বাঙালিদের কাছে থাইল্যান্ড বরাবরই একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ঘুরতে যেতে চাইলে অবশ্যই একটি ভিজিট ভিসা বা ট্রাভেল ভিসা প্রয়োজন হবে। ভিজিট ভিসা পেতে করণীয়, কত টাকা লাগবে এবং অন্যান্য তথ্য জানতে পারবেন এই পোস্টে।
যারা স্বপ্ন দেখছেন থাইল্যান্ডের সুন্দর সৈকত সহ বিভিন্ন সুন্দর জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর, তাদের স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপটি হচ্ছে ভিসা সংগ্রহ করা। পাসপোর্ট থাকলে সঠিক পদ্ধতিতে ট্রাভেল ভিসার জন্য আবেদন করার মাধ্যমে খুব কম সময়ের মাঝেই ভিসা নিতে পারবেন এবং পাড়ি জমাতে পারবেন আপনার পছন্দের গন্তব্যে।
তো চলুন, বাংলাদেশ থেকে ভিজিট ভিসায় থাইল্যান্ড যাওয়ার উপায় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া যাক।
বাংলাদেশ থেকে ভিজিট ভিসায় থাইল্যান্ড যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ভিজিট ভিসায় যেতে চাইলে থাইল্যান্স রয়্যাল এম্বাসি, বাংলাদেশ এ যোগাযোগ করতে হবে। এরপর, তাদের থেকে ভিজিট ভিসা আবেদনের ফরম সংগ্রহ করতে হবে এবং সেটি পূরণ করে যথাযথ ডকুমেন্ট এবং ভিসা ফি সহ জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেয়ার জন্য এম্বাসিতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
এই পদ্ধতিতে থাইল্যান্স টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। থাইল্যান্ড ঘুরতে যেতে চাইলে ভিসা আবেদন করার সময় বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। ভিসা আবেদন করার সময় যেসব ডকুমেন্ট জমা দিতে হয় সেগুলোর একটি তালিকা নিম্নরূপ। এছাড়া, ভিসা ফি কত টাকা এবং থাইল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে সেসব তথ্য জানতে শেষ অব্দি পড়ুন।
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কী কী লাগে
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ঘুরতে যেতে চাইলে ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সময় আবেদন ফরমের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। এসব ডকুমেন্ট হচ্ছে —
- কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট।
- সঠিকভাবে পূরণকৃত এবং আবেদনকারীর স্বাক্ষরসহ মূল ভিসা আবেদন ফর্ম।
- সম্প্রতি তোলা পাসপোর্ট সাইজের সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের রঙিন ছবি (২ কপি)।
- থাইল্যান্ডে যাওয়া এবং ফেরত আসার কনফার্মড বা রিজার্ভেশন করা এয়ার টিকেটের কপি।
- থাইল্যান্ডে থাকাকালীন হোটেল রিজার্ভেশনের কনফার্মেশন কপি বা কারো কাছে অতিথি হিসেবে থাকলে তার আমন্ত্রণপত্র এবং ঠিকানার প্রমাণ।
- আবেদনকারীর ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিগত ৬ মাসের মূল স্টেটমেন্ট।
- ব্যাংক থেকে প্রদত্ত সলভেন্সি সার্টিফিকেট।
- চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে অফিস থেকে দেওয়া নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC)।
- ব্যবসায়ী হলে আপডেট করা ট্রেড লাইসেন্সের কপি (ইংরেজি অনুবাদ ও নোটারি সহ)
- ছাত্র হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া আইডি কার্ডের কপি এবং ছুটির অনুমোদনপত্র।
- ম্যারিজ সার্টিফিকেট (যদি স্বামী/স্ত্রী একসাথে ভ্রমণ করেন), পূর্ববর্তী থাই ভিসার কপি (যদি থাকে) ইত্যাদি।
থাইল্যান্ড ভিজিট ভিসার আবেদন পত্র সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। এরপর, আবেদন পত্রের সঙ্গে উপরে উল্লিখিত কাগজপত্রগুলো সংযুক্ত করতে হবে। অতঃপর, এগুলো নিয়ে থাইল্যান্ড রয়্যাল এম্বাসিতে গিয়ে ভিসা আবেদন করতে হবে। ভিসা আবেদন করার প্রক্রিয়া নিচে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে তা বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে। ভিসা আবেদন করার জন্য ভিসা এম্বাসির অ্যাপয়েনমেন্ট নেয়া, ভিসা চার্জ, বিমান ভাড়া, থাইল্যান্ডে থাকা-খাওয়ার খরচ এবং কেনাকাটা করলে তার খরচ।
প্রথমেই আসে ভিসার খরচ, যা সাধারণত এম্বাসি ফি ও ভিসা সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ঘুরতে যাওয়ার খরচের সবচেয়ে বড় অংশ হলো বিমান ভাড়া। ঢাকা থেকে ব্যাংকক পর্যন্ত আসা-যাওয়ার টিকেট, ভ্রমণের সময় (সিজন বা অফ-সিজন) এবং কত আগে বুকিং করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।
থাইল্যান্ডে থাকার খরচও আপনার পছন্দের ওপর নির্ভর করবে। যেমন- আপনি যদি বাজেট হোটেলে থাকেন, তাহলে প্রতি রাতের জন্য ২০০০-৪০০০ টাকা এবং মাঝারি মানের হোটেলে ৪০০০-৮০০০ টাকা বা তার বেশি লাগতে পারে। এর সাথে যোগ হবে প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া গড়ে ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা এবং যাতায়াতের গড়ে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা।
এছাড়াও দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন ও কেনাকাটা করার জন্য আপনার বাজেট অনুযায়ী অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন হবে। সব মিলিয়ে, ৫ থেকে ৭ দিনের একটি সাধারণ থাইল্যান্ড ভ্রমণে বাজেট অনুযায়ী চললে জনপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাগবে। মাঝারি মানের বাজেটে চললে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। বিলাসবহুলভাবে ভ্রমণ করলে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বা তার চেয়ে বেশি খরচ হতে পারে।
থাইল্যান্ড ভিজিট ভিসা আবেদন করার নিয়ম
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ভিজিট ভিসায় যেতে চাইলে ভিসা আবেদন করতে হবে। আবেদন করার জন্য আমরা কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করবো। কী কী ধাপ এবং কী কী করতে হবে তা নিম্নরূপ —
ধাপ ১ — প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ
থাইল্যান্ড ট্রাভেল ভিসায় যেতে প্রয়োজনীয় কী কী কাগজপত্র লাগবে তার একটি তালিকা ইতোমধ্যে উপরে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। যেসব কাগজপত্র আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, সেগুলো সংগ্রহ করুন এবং ভিসা আবেদন পত্র সংগ্রহ করুন। এই লিংকে ক্লিক করে থাইল্যান্ড ভিসা আবেদন পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।
ধাপ ২ — অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ
VFS Global এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। অথবা, থাই রয়্যাল এম্বাসি গিয়ে সরাসরি একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। এরপর, অ্যাপয়েন্টমেন্ট এ দেয়া তারিখে আবেদন পত্র জমা দিতে হবে।
ধাপ ৩ — আবেদন ও ফি জমা
নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিনে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র এবং ভিসা ফি সহ VFS Global সেন্টারে উপস্থিত হয়ে আপনার ভিসা আবেদনটি জমা দিন। সেখানে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য (যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট) এবং পাসপোর্ট জমা দিন।
ধাপ ৪ — আবেদন ট্র্যাকিং ও পাসপোর্ট সংগ্রহ
ভিসা আবেদন জমা দেয়ার পর ৭ দিন থেকে ১৫ দিন সময় লাগে ভিসা প্রসেসিং হতে। ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ দিন অব্দি সময় লাগতে পারে। উক্ত সময়ের মাঝে VFS Global এর ওয়েবসাইট ভিজিট করে আপনার ভিসা আবেদনটি ট্রাক করতে পারবেন এবং ভিসা রেডি হয়েছে কিনা জেনে নিতে পারবেন।
ভিসা রেডি হয়ে গেলে থাই রয়্যাল এম্বাসি বা VFS Global এর সেন্টারে উপস্থিত হয়ে ভিসা এবং পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। এরপর, ভিসা সহ থাইল্যান্ড ভ্রমণ করতে পারবেন।
শেষ কথা
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ভিজিট ভিসায় যাওয়ার উপায়, কী কী কাগজপত্র লাগবে, কত টাকা লাগবে এবং থাইল্যান্ড ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই পোস্টে। এছাড়াও, যারা থাইল্যান্ড ঘুরতে যেতে ইচ্ছুক তারা নিচের প্রশ্নোত্তর সেকশনটি দেখতে পারেন। এখানে, আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন।
FAQ
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কত সময় লাগে?
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে ৩ ঘণ্টার মতো সময়ও লেগে থাকে। ফ্লাইট ডিলে কিংবা অন্য কোনো সমস্যা না হলে এই সময়ের মাঝেই বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড পৌঁছে যাবেন।
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড কত কিলোমিটার?
বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ২,২৭৩.১ কি.মি. ।
থাইল্যান্ড ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?
থাইল্যান্ড ১ টাকা বাংলাদেশের ৩.৬৭ টাকা। টাকার মান উঠানামা করে থাকে।
থাইল্যান্ড ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কোনটি?
থাইল্যান্ড ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। এই সময়ে তাপমাত্রা মনোরম থাকে এবং বৃষ্টিপাত কম হয়।
থাইল্যান্ডের ভিসা কিভাবে পাওয়া যায়?
VFS Global সেন্টারে ভিসা আবেদন জমা দেয়ার মাধ্যমে কিংবা থাই রয়্যাল এম্বাসিতে ভিসা আবেদন জমা দেয়ার মাধ্যমে থাইল্যান্ডের ভিসা পেতে পারেন।
থাইল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা পেতে কত খরচ হয়?
থাইল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা পেতে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।