সবচেয়ে কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়

সবচেয়ে কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়

ইউরোপ যেতে চাচ্ছেন কিন্তু বাজেট কম? সবচেয়ে কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায় জানতে চান? এই পোস্টে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে কত টাকা লাগে এবং কোন দেশে সবথেকে কম খরচে যেতে পারবেন সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ইউরোপ মহাদেশে অনেক দেশ রয়েছে যেগুলো অনেক ধনী রাষ্ট্র। এসব দেশে যেতে চাইলে ভালো পরিমাণ টাকা খরচ করা লাগে। আবার, উক্ত দেশগুলোতে আয় এবং ব্যয় উভয়ই বেশি। তবে, ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান বা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এসব দেশে যেতে চান এমন মানুষ আমাদের দেশে নেহায়তই কম না।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে হলে কত টাকা খরচ করতে হয়, দৈনন্দিন খরচ কেমন এবং এসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোন দেশে অল্প খরচে যাওয়া যায় তা বিস্তারিত জানতে শেষ অব্দি পড়ুন।

সবচেয়ে কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়

ইউরোপ মহাদেশে বিভিন্ন দেশ রয়েছে। পশ্চিম ইউরোপ, মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার খরচ বেশি আবার এসব দেশে আয় এবং ব্যায়ের পরিমাণ বেশি। অর্থাৎ, এসব দেশে বাংলাদেশ থেকে যেতে চাইলে অনেক পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে। আবার, যেমন আয় করবেন, তেমন ব্যয়ও রয়েছে।

তবে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যেতে চাইলে কম খরচেই যাওয়া যায়। এসব দেশে যাওয়ার খরচ যেমন কম, ঠিক তেমনি ভালো পরিমাণ টাকা আয় করলেও দৈনন্দিন জীবনে খরচ হবে কম। অর্থাৎ, যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে যেতে চাচ্ছেন, কিন্তু খরচ বেশি, তারা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে পারেন।

পূর্ব ইউরোপের উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হলো বেলারুশ, বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, মোলডোভা, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, ইউক্রেন, আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মন্টিনিগ্রো, উত্তর মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া এবং স্লোভেনিয়া ইত্যাদি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত এই দেশগুলোতে যেতে চাইলে অল্প খরচে যেতে পারবেন। যদি, ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে চান, তাহলে যে কোম্পানিতে কাজের জন্য যাবেন, সেখানে থেকে একটি ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করুন। এরপর, অল্প ভিসা খরচে এসব দেশ যেতে পারবেন। এছাড়া, পড়ালেখার উদ্দেশ্যে বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে চাইলেও অল্প খরচেই যেতে পারবেন।

ইউরোপের কোন দেশে যেতে কত টাকা লাগে

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে চাইলে বিভিন্ন রকম খরচ পড়বে। কাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন নাকি ভ্রমণ উদ্দেশ্যে নাকি পড়ালেখার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে খরচ কম বা বেশি হবে। এছাড়া, বিমানের টিকেটের দাম, ভিসা প্রসেসিং করতে বাড়তি কোনো টাকা যাচ্ছে কিনা এসব বিষয়ও টাকার পরিমাণের উপর প্রভাব ফেলবে।

তবে, ইউরোপের যেসব দেশে সাধারণত আমাদের বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ উদ্দেশ্যে, পড়ালেখার উদ্দেশ্যে কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া হয়, সেসব দেশে যেতে কত টাকা লাগে তা নিচে আলোচনা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ পড়লে কোন দেশে যাওয়া খরচ কত টাকা তা বুঝতে পারবেন।

ইতালি যেতে কত টাকা লাগে

ইউরোপের সবথেকে জনপ্রিয় গন্তব্য হচ্ছে ইতালি। ইতালি যেতে আমাদের দেশ থেকে সরকারিভাবে ৫-৬ লক্ষ টাকা লাগে। আবার, বেসরকারিভাবে কোনো এজেন্সির সহযোগিতা নিয়ে যেতে চাইলে কিংবা কোনো দালালের সহযোগিতা নিয়ে যেতে চাইলে ৮ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা অব্দি লাগতে পারে।

ইউরোপ মহাদেশের জনপ্রিয় দেশ ইতালি আসা অনেকের ইচ্ছে হওয়ার কারণে এই দেশে আসার খরচ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। তবে, ইতালিতে আসতে পারলে ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করা সম্ভব। তাই, যেকোনো কাজে দক্ষতা অর্জন করে ইতালি আসলে কয়েক বছরেই ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করা যাবে।

ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ইতালি আসতে চাইলে সরকারি মাধ্যম ব্যবহার করে অল্প খরচে ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে, ভ্রমণ করার উদ্দেশ্যে ইতালি যেতে চাইলে ১.৫-২ লক্ষ টাকার মাঝে যেতে পারবেন। অপরদিকে, স্টুডেন্ট ভিসায় ৫-৬ লক্ষ টাকা লেগে থাকে। এক্ষেত্রে, স্কলারশিপের উপর নির্ভর করে আপনার খরচ কম বা বেশি হতে পারে।

বুলগেরিয়া যেতে কত টাকা লাগে

বুলগেরিয়া যেতে চাইলে ৫-৬ লক্ষ টাকা লেগে থাকে। বুলগেরিয়ার বিভিন্ন ভিসা ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে যাওয়া খরচ কম/বেশি হয়ে থাকে। বুলগেরিয়া যেতে চাইলে সরকারিভাবে আবেদন করুন। অনেকেই গার্মেন্টস ভিসায় আবেদন করেন। সেক্ষেত্রে, সরকারিভাবে যেতে চাইলে ৫-৬ লক্ষ টাকা লাগবে। যদি, এজেন্সি বা দালালের সহযোগিতা নেন, সেক্ষেত্রে ৭-৮ লক্ষ টাকা বা তার বেশি লাগতে পারে।

ভিজিট ভিসায় বুলগেরিয়া যেতে চাইলে ২ লক্ষ থেকে ২.৫ লক্ষ টাকার মাঝে যেতে পারবেন এবং ছোট একটি ট্যুর দিয়ে আসতে পারবেন।

পোল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে

ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পোল্যান্ড যেতে ৪ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা লাগে। সরকারিভাবে আবেদন করলে এই খরচে পোল্যান্ড যেতে পারবেন। তবে, কোনো দালালের সহযোগিতা নিয়ে কিংবা কোনো এজেন্সির সহযোগিতায় যদি পোল্যান্ড যেতে চান, তাহলে খরচ ৭-৮ লক্ষ টাকা কিংবা তার বেশি হতে পারে।

স্টুডেন্ট ভিসায় পোল্যান্ড যেতে ৩-৪ লক্ষ টাকা লাগে। আবার, ভিজিট ভিসায় পোল্যান্ড যেতে ১ লক্ষ টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা লাগে। তবে, নিজে থেকে ভিসা আবেদন সহ অন্যান্য কাজ করলে খরচ অনেকাংশে কমে আসে। সরকারিভাবে ওয়ার্ক পারমিটের উদ্দেশ্যে যেতে চাইলে যেকোনো কাজে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকতে হবে।

রোমানিয়া যেতে কত টাকা লাগে

সরকারিভাবে রোমানিয়া যেতে ৪-৫ লক্ষ টাকা লাগে। নিজে আবেদন করে বা দালালের সহযোগিতা নিয়ে রোমানিয়া যেতে চাইলে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা লাগতে পারে। এছাড়াও, অনেক ক্ষেত্রে আরও বেশি টাকা লেগে থাকে। তবে, আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসায় রোমানিয়া যেতে চান, তাহলে ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকার মাঝেই রোমানিয়া যেতে পারবেন।

তবে, রোমানিয়া ভ্রমণ করতে চাইলে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকার মাঝে ভ্রমণ করে আসতে পারবেন। যাতায়াত খরচ, থাকা এবং খাওয়ার খরচ মিলে কয়েকদিনের একটি ট্যুর দিতে পারবেন।

লিথুয়ানিয়া যেতে কত টাকা লাগে

নিজে আবেদন করে লিথুনিয়া যেতে চাইলে ৬-৭ লক্ষ টাকা খরচ হবে। তবে, সরকারিভাবে লিথুনিয়া যাওয়ার আবেদন করলে ৩-৪ লক্ষ টাকার মাঝে লিথুনিয়া যেতে পারবেন। সরকারিভাবে লিথুনিয়া যেতে চাইলে যেকোনো কাজের উপর আপনার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা থাকতে হবে। তবেই, ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং লিথুনিয়া গিয়ে ভালো বেতনে কাজ করতে পারবেন।

আলবেনিয়া যেতে কত টাকা লাগে

আলবেনিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় যেতে চাইলে ব্যক্তিগতভাবে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রায় ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। তবে, সরকারিভাবে আলবেনিয়া যাওয়ার সুযোগ পেলে ১.৫ লক্ষ টাকা থেকে ২.৫ লক্ষ টাকার মতো লাগতে পারে। কিন্তু সরকারিভাবে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো কাজে ভালো দক্ষতা থাকা অপরিহার্য। যেকোনো কাজে অভিজ্ঞ হলে এবং দক্ষতা থাকলে সরকারিভাবে আলবেনিয়া গিয়ে ভালো বেতনে কাজ করতে পারবেন।

শেষ কথা

সবচেয়ে কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায় এসব বিষয় নিয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার খরচ তুলে ধরা হয়েছে। পোস্টটি শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়লে ইউরোপের কোন দেশে যেতে কত টাকা লাগে তা জানতে পারবেন এবং তুলনা করার মাধ্যমে কোন দেশে যেতে সবথেকে কম খরচ লাগবে বুঝতে পারবেন।

তবে, ভিসা ক্যাটাগরি এবং আপনি কী উদ্দেশ্যে ইউরোপ যাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে খরচ কম বা বেশি হবে। ট্রাভেল ভিসায় সবথেকে কম খরচ লাগে। স্টুডেন্ট ভিসায় স্কলারশিপ এর উপর খরচ নির্ভর করে। অপরদিকে, ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় সরকারিভাবে ইউরোপ গেলে অল্প খরচে যাওয়া যায়। এজেন্সি বা দালালের সহযোগিতা নিলে খরচ বেশি পড়ে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *