বাংলাদেশের যে পাঁচটি জায়গায় আপনার ভ্রমণ করা উচিত
নদীমাতৃক আমাদের এই দেশে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। দেশের আনাচে-কানাচে রয়েছে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের বিভিন্ন প্রতীক। ভ্রমণপিপাসু মানুষদের জন্য বাংলাদেশের পাঁচটি জায়গা অবশ্যই ভ্রমণ করা উচিত। এসব স্থান নিয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত কথা বলবো।
সবুজ-শ্যামল আমাদের এই দেশটি ভ্রমণপিপাসু মানুষদের কাছে অনেক আগে থেকেই পছন্দের একটি জায়গা। ইতিহাস এবং ঐতিহ্য জানান দেয় এমন অসংখ্য জায়গা আছে আমাদের দেশে। কিন্তু, এসব জায়গার মাঝে এমন পাঁচটি জায়গা আছে যা প্রায় প্রতিটি মানুষের একবার হলেও ভ্রমণ করা উচিত।
বাংলাদেশের যে পাঁচটি জায়গায় আপনার ভ্রমণ করা উচিত সেগুলো সম্পর্কে জানতে শেষ অব্দি পড়ুন। চলুন, জেনে নেয়া যাক।
বাংলাদেশের সেরা ৫ টি দর্শনীয় স্থান
প্রকৃতির অকৃপণ ভালোবাসায় সিক্ত আমাদের এই দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য স্থান, যা ভ্রমণপিপাসুদের মনকে প্রশান্ত করে তোলে। পাহাড়ের চূড়া থেকে শুরু করে সমুদ্রের গভীর পর্যন্ত এই দেশের রূপের যে বৈচিত্র্য, তা এককথায় অনন্য। এই বিশাল সৌন্দর্যের ভান্ডার থেকে সেরা কয়েকটি স্থান বেছে নেওয়া বেশ কঠিন কাজ। প্রতিটি জায়গারই নিজস্ব স্বকীয়তা ও আকর্ষণ রয়েছে, যা একটিকে অন্যটির থেকে আলাদা করে তোলে।
তবে কিছু স্থান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং পর্যটকদের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে। এই স্থানগুলো ভ্রমণ করে শুধু সৌন্দর্য দেখতে পাবেন না, সাথে এসব স্থানের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কেও জানতে পারবেন। বাংলাদেশের সেরা ৫টি দর্শনীয় স্থানের তালিকা এবং সেসব স্থান নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সেরা পাঁচটি দর্শনীয় স্থান:
- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
- সুন্দরবন
- সাজেক ভ্যালি
- সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপ
- ঐতিহাসিক বাগেরহাট
উপরোক্ত তালিকায় উল্লিখিত এই পাঁচটি দর্শনীয় স্থান নিয়ে নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো আলোচনা করা হয়েছে। চলুন, জেনে নেয়া যাক।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
যখনই বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থানের কথা আসে, সবার আগে যে নামটি উঠে আসে তা হলো কক্সবাজার। এটি কেবল বাংলাদেশের নয়, বরং পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের বিশালতা যে কাউকে বাকরুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এখানে দাঁড়ালে একদিকে যেমন চোখে পড়ে দিগন্তবিস্তৃত বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ, তেমনি কানে ভেসে আসে এই সাগরের অবিরাম গর্জন।
ঢেউয়ের শব্দ আর এখানকার বাতাস আপনার শরীরের সব ক্লান্তি নিমিষেই দূর করে দেবে। ভোরে সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্য ওঠা দেখাটা যেমন শান্তির, ঠিক তেমনি বিকেলে রঙিন আকাশে ধীরে ধীরে সূর্যের ডুবে যাওয়ার দৃশ্যটাও তৈরি করবে অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।
তবে কক্সবাজারের আকর্ষণ কেবল সমুদ্রের পানিতে নামা আর এর পাড়ে বসে থাকার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় না। এর সাথে আরও ঘুরে দেখার মতো জায়গা আছে। যেমন- হিমছড়ি ঝর্ণা, পাথুরে সৈকত ইনানী বিচ এবং পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রোড। এই রাস্তায় ড্রাইভ করার সময় একপাশে সবুজ পাহাড় আর অন্যপাশে বিশাল সমুদ্রের যে দৃশ্য দেখা যায়, তা আপনি সহজে ভুলতে পারবেন না। আর এই সবকিছুর সাথে যোগ হয় তাজা সামুদ্রিক মাছের মজাদার সব খাবার, যা কক্সবাজার ভ্রমণকে আরও জমিয়ে তোলে।
সুন্দরবন
সুন্দরবন আমাদের দেশের গর্ব, আর এটি ইউনেস্কো স্বীকৃত একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনটি মূলত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাড়ি হিসেবেই সারা বিশ্বে পরিচিত।
সুন্দরবনের আসল মজাটা পেতে হলে আপনাকে এর ভেতরের নদী-নালা আর ছোট ছোট খালগুলো দিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। লঞ্চ বা নৌকায় করে এই সবুজের রাজ্যে ঢোকার অভিজ্ঞতাটাই অন্যরকম। সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়ার এত ঘন বন যে দিনের বেলাতেও এর ভেতরে আলো ঠিকমতো পৌঁছায় না। এই শান্ত পরিবেশে হঠাৎ করেই হয়তো আপনি হরিণের পাল বা নদীর পাড়ে রোদ পোহানো কুমিরের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। আর কপাল খুব ভালো থাকলে, বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও দেখা মিলতে পারে!
পর্যটকদের জন্য করমজল, কটকা, হিরণ পয়েন্টের মতো বেশ কিছু ঘোরার স্পটও আছে। এখানকার প্রকৃতি, পাখির ডাক আর রাতের নীরবতা আপনাকে শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে অনেক দূরে এক অন্যরকম প্রশান্তি দেবে।
সাজেক ভ্যালি
যারা পাহাড় আর মেঘ ভালোবাসেন, তাদের জন্য সাজেক ভ্যালি একটা স্বপ্নের জায়গা। যদিও এটা রাঙ্গামাটি জেলায়, কিন্তু সবাইকে খাগড়াছড়ি হয়েই এখানে যেতে হয়। সমুদ্র থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উঁচুতে হওয়ায় সাজেককে মেঘের রাজ্য বলা হয়। এখানে দাঁড়ালে মনে হবে, তুলার মতো নরম মেঘ আপনার পায়ের নিচে খেলা করছে আর চাইলেই হাত দিয়ে ছুঁতে পারবেন।
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পাহাড়ের নিচ থেকে মেঘের সমুদ্র দেখার দৃশ্যটা এককথায় অসাধারণ! সাজেকের রুইলুই পাড়া আর কংলাক পাড়া হলো ঘোরার মূল জায়গা। কংলাক পাড়া সবচেয়ে উঁচু হওয়ায় সেখান থেকে চারপাশের পাহাড়ের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়।
এখানকার আদিবাসী মানুষের জীবনযাত্রা দেখা আর তাদের বিখ্যাত ব্যাম্বু চিকেন খাওয়াটা আপনার ঘুরতে যাওয়ার আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেবে। রাতে আকাশ পরিষ্কার থাকলে কোটি কোটি তারার মেলা বসে, যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপ
বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণে, নীল পানির মধ্যে ভেসে থাকা সুন্দর একটি দ্বীপ হলো সেন্ট মার্টিন। এটাই আমাদের দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামেও পরিচিত। টেকনাফ থেকে জাহাজ বা ট্রলারে করে কয়েক ঘণ্টার সমুদ্রযাত্রা শেষে দ্বীপে পা রাখার সাথে সাথেই এর শান্ত পরিবেশ আর নীল পানি আপনার সব ক্লান্তি দূর করে দেবে।
এখানকার পানি এতটাই পরিষ্কার যে, উপর থেকেই ছোট ছোট রঙিন মাছ আর প্রবাল দেখা যায়। পুরো দ্বীপজুড়ে সারি সারি নারিকেল গাছ দেখতেও খুব ভালো লাগে। যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তারা স্নরকেলিং বা স্কুবা ডাইভিং করে পানির নিচের জগৎটা ঘুরে দেখতে পারেন। দ্বীপের আরেকটা বড় আকর্ষণ হলো ছেঁড়া দ্বীপ, যেটা জোয়ারের সময় আলাদা হয়ে যায়।
রাতে সৈকতে বসে তাজা সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ খাওয়া আর ডাবের পানি পান করার অভিজ্ঞতাটা একদম অন্যরকম। সেন্ট মার্টিন ঘুরতে গেলে আপনার মন নিশ্চিতভাবেই শান্তিতে ভরে উঠবে।
ঐতিহাসিক বাগেরহাট
যারা ঘুরতে গিয়ে প্রকৃতির পাশাপাশি পুরোনো দিনের ইতিহাস জানতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য বাগেরহাট দারুণ একটা জায়গা। পুরোনো এই শহরটি মূলত হযরত খান জাহান আলী (রঃ) এর তৈরি করা বিভিন্ন স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো ষাট গম্বুজ মসজিদ, যা ইউনেস্কোর একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। মজার ব্যাপার হলো, নাম ষাট গম্বুজ হলেও মসজিদটিতে ৭৭টি গম্বুজ আছে!
পোড়ামাটির কাজ করা এই বিশাল মসজিদে ঢুকলে এর শান্ত আর গম্ভীর পরিবেশটা মন ছুঁয়ে যায়। এটি ছাড়াও বাগেরহাট শহরে আরও অনেক পুরোনো স্থাপনা ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে নয় গম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলীর মাজার আর তার খোঁড়া দিঘিগুলোও বেশ পরিচিত।
বাগেরহাট ঘুরতে গেলে আপনার মনে হবে যেন টাইম মেশিনে চড়ে কয়েকশ বছর পেছনে চলে গেছেন।
শেষ কথা
সবুজ-শ্যামলে ঘেরা আমাদের এই নদীমাতৃক দেশে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে দর্শনীয় অনেক স্থান রয়েছে। প্রতিটি স্থানের রয়েছে আলাদা পরিচয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং স্বকীয়তা। দেশের মানুষ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা আমাদের দেশের এসব সৌন্দর্য দেখা জন্য প্রতি বছর বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন। জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে বেশ কিছু জায়গার স্থান হবে তালিকার শীর্ষে।
তাই, বাংলাদেশের যে পাচতি জায়গায় আপনার একবার হলেও ভ্রমণ করা উচিত এমন পাঁচটি স্থানের তালিকা এবং এসব স্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য শেয়ার করেছি এই পোস্টে। শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়লে বাংলাদেশের সেরা ৫ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন।