সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন
দেশের সেবা করার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে চান? সেনাবাহিনীতে যোগদান করার ক্ষেত্রে কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে, কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে এসব তথ্য জানা আবশ্যক।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে প্রতি বছর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট বয়স থাকলে সৈনিক সহ বিভিন্ন পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন আপনিও। সাধারণত এসএসসি বা সমমান পাশ থাকলেই সেনাবাহিনীর জন্য আবেদন করা যায়।
বয়স এবং পড়ালেখা ছাড়াও সেনাবাহিনীতে আবেদন করার পর যাচাই-বাছাই পর্বে টিকে নিয়োগ পাওয়ার জন্য বেশ কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। চলুন, এসব বিষয় বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে কী কী যোগ্যতা লাগে
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে উচ্চতা, বয়স, শারীরিক ফিটনেস সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এসব কিছু ঠিক থাকলে আবেদন করার পর নির্দিষ্ট তারিখে মাঠে উপস্থিত হয়ে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে তবেই সৈনিক পদে নিয়োগ পাবেন। বয়স, উচ্চতা এবং কাগজপত্র সম্পর্কে আরও বিস্তারিত নিম্নরূপ —
সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে কেমন উচ্চতা লাগে
সাধারণভাবে, পুরুষ প্রার্থীদের ন্যূনতম শারীরিক উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং ওজন ৪৯.৯০ কেজি হতে হবে। এছাড়া, বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি এবং প্রসারিত অবস্থায় ৩২ ইঞ্চি হওয়া আবশ্যক। তবে, দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের পুরুষ প্রার্থীদের জন্য এই নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি গ্রহণযোগ্য।
নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে, ন্যূনতম শারীরিক উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং ওজন ৪৭ কেজি হতে হবে। বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ২৮ ইঞ্চি এবং প্রসারিত অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি হওয়া প্রয়োজন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের নারী প্রার্থীদের জন্য ন্যূনতম ৫ ফুট ১ ইঞ্চি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে বয়স কত লাগে
সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে, আবেদনের জন্য বয়স সাড়ে ১৬ বছর থেকে ২১ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে, যারা ইতোমধ্যে সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত আছেন, তারা ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার হলফনামা (এফিডেফিট) গ্রহণযোগ্য হবে না। অর্থাৎ, নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা বা জন্ম নিবন্ধন সনদে উল্লেখিত বয়সকেই চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হবে।
সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে কী কী কাগজপত্র লাগে
সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে আবেদন করতে হয় অনলাইনে। অনলাইনে আবেদন করার সময় এবং পরীক্ষার জন্য যেদিন ডাকা হবে, সেদিন নিম্নোক্ত কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদপত্র অথবা মার্কশিট
- প্রশংসাপত্র অথবা প্রবেশপত্র
- অভিভাবকের সম্মতিসূচক সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- নাগরিকত্ব সনদপত্র
- চারিত্রিক সনদপত্র
- জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র
- জাতীয় পরিচয়পত্র
উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো আবেদন করার সময় সাবমিট করতে হবে। আবেদন করার সময় এসব কাগজপত্রের তথ্যের সাথে মিল রেখে আবেদন করতে হবে। আবেদন সম্পন্ন হলে নির্ধারিত তারিখের আগে আপনার দেয়া মোবাইল নাম্বারে এসএমএস করে মাঠ করার জন্য ডাকা হবে। উক্ত দিনে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য পড়ালেখা এবং শারীরিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। সৈনিক হওয়ার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিবেন তা নিচে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন, জেনে নেয়া যাক।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য প্রথমেই আবেদন করতে হবে। আপনি যদি এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাশ করে থাকেন এবং আপনার বয়স ১৬ এর বেশি হয়ে থাকে, তাহলে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার পর নির্দিষ্ট তারিখে মাঠ করার জন্য ডাকা হয়। উক্ত দিনে, যতগুলো প্রার্থী আছে, সবার মাঝে বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়ে এরপর নিয়োগ প্রদান করা হয়।
সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়ার পূর্বে কয়েকটি পরীক্ষা নেয়া হয়। এর মাঝে, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই করার জয়ন বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়া হয় এবং জ্ঞান যাচাই করার জন্য লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা নেয়া হয়। সবগুলো পরীক্ষায় পাস করলে শেষে মেডিক্যাল করা হয়। ফলে, উক্ত প্রার্থীর কোনো শারীরিক অক্ষমতা আছে কিনা তা জানা যায়।
সেনাবাহিনীর মাঠ করার সময় বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নেয়া হয়। দৌড়, পুশ আপ, চোখের পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, মেডিক্যাল টেস্ট ইত্যাদি। এসব পরীক্ষায় টিকতে চাইলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতি নেয়ার পদ্ধতি নিম্নরূপ —
দৌড় প্রস্তুতি
সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য যেদিন মাঠ করতে ডাকবে, সেদিন ৫০০ মিটার দৌড়াতে হবে। ৫০০ মিটার দৌড় মাত্র ২.৫ মিনিটে সম্পন্ন করতে হবে। তাই, এত কম সময়ে ৫০০ মিটার দৌড়ানোর জন্য অবশ্যই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
এজন্য, সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করতে চাইলে প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়ানোর অভ্যাস করতে হবে। অল্প সময়ে যত বেশিদূর পর্যন্ত দৌড়ানো যায়, তার প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে করে, ২.৫ মিনিটে ৫০০ মিটার দৌড়ে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানে থাকতে পারবেন।
পুশ আপ প্রস্তুতি
দৌড় দেয়ার পর পুশ আপ দেয়ার জন্য বলা হয়। পুশ আপ দেয়ার সময় ২০টি কিংবা ২৫টি পুশ আপ দিতে বলতে পারে। পুশ আপ ঠিকভাবে দিতে হবে। এজন্য, প্রতিদিন ১০টি করে পুশ আপ দেয়ার প্রস্তুতি নিতে পারেন। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে হবে। এতে করে, মাঠে যখন পুশ আপ দিতে বলবে তখন খুব সহজেই পুশ আপ দিতে পারবেন।
পুল আপ প্রস্তুতি
পুশ আপের পাশাপাশি পুল আপ করতে হবে মাঠের পরীক্ষায়। তাই, পুশ আপের প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি পুল আপের প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য, বাসায় দুইটি লাঠি মাটিতে পুতে তার উপরে একটি লাঠি বেধে পুল আপ করার প্রস্তুতি নিতে পারবেন। অথবা, দুইটি গাছের মাঝে একটি লাঠি বেধেও পুল আপ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
চোখের পরীক্ষা
সেনাবাহিনীতে টিকতে হলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকতে হবে। এজন্য, প্রার্থীদেরকে দূর থেকে একটি বোর্ডে বিভিন্ন অক্ষর লিখে সেগুলো পড়তে বলা হয়। এক চোখ দিয়ে দেখে, দুই চোখ দিয়ে দেখে এভাবে বিভিন্ন অক্ষর বলতে হবে। আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকলে এই পরীক্ষায় সহজেই উত্তীর্ণ হতে পারবেন।
লিখিত পরীক্ষা
সৈনিক পদে টিকতে চাইলে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্নের উপর এই লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। সেনাবাহিনীর আবেদন করার পর থেকে কিংবা তার আগে থেকেই এসব বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাহলে, পরীক্ষার দিন সব প্রশ্নের উত্তর করতে পারবেন এবং পরীক্ষায় ভালো মার্ক পাবেন।
মেডিক্যাল টেস্ট
সবগুলো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মেডিক্যাল টেস্ট করা হবে। শরীরের কোথাও ভাঙ্গা/মচকা আছে কিনা, কোনো জটিল রোগ আছে কিনা তা যাচাই করা হয় এই পদ্ধতিতে। আপনার যদি কোনো বড় রোগ না থাকে, তাহলে সহজেই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন। মেডিক্যাল টেস্ট করে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেখানে থেকেই বাদ দেয়া হবে।
তাই, সেনাবাহিনীতে আবেদন করার পূর্বে মেডিক্যাল টেস্ট করে দেখুন আপনার শরীর ফিট আছে কিনা। যদি ফিট থাকেন, তবেই সৈনিক পদে আবেদন করুন।
শেষ কথা
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন তা শেয়ার করা হয়েছে এই পোস্টে। সেনাবাহিনীর মাঠ করার সময় বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়া হয়। উক্ত পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হতে চাইলে অবশ্যই আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতি নেয়া থাকলে যেদিন এসএমএস করে মাঠ করার জন্য ডাকা হবে, সেদিন উপস্থিত হয়ে মাঠ করতে পারবেন এবং পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হতে পারবেন। পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হতে পারলে তবেই নিয়োগ পাওয়া যাবে।