বাংলাদেশ থেকে কম খরচে কোন দেশে ট্যুরে যাওয়া যায়?

বাংলাদেশ থেকে কম খরচে কোন দেশে ট্যুরে যাওয়া যায়? সম্পূর্ণ গাইডলাইন

বিদেশ ভ্রমণ অনেকের কাছেই ব্যবহুল মনে হতে পারে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা আর কিছু টিপস জানা থাকলে সীমিত বাজেটেই ঘুরে আসা যায় পছন্দের অনেক দেশ থেকে। বাংলাদেশ থেকে কম খরচে কোন দেশে ট্যুরে যাওয়া যায় তা নিয়েই বিস্তারিত গাইডলাইন থাকছে এই পোস্টে।

ভৌগোলিকভাবে কাছাকাছি রয়েছে এমন বেশ কিছু দেশ ঘুরতে যেতে পারি আমরা সবথেকে কম খরচে। এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশেই ঘুরতে যাওয়া এবং থাকা খাওয়ার খরচ অনেক কম। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে অল্প খরচে ট্যুর দিয়ে আসতে পারেন।

তো চলুন, বাংলাদেশ থেকে অল্প খরচে কোন কোন দেশে ট্যুরে যাওয়া যায় এবং ট্যুর দিতে চাইলে কী কী বিষয় জানা থাকা আবশ্যক এসব বিষয় জেনে নেয়া যাক।

বাংলাদেশ থেকে কম খরচে কোন দেশে ট্যুরে যাওয়া যায়

কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ মানে এই নয় যে আপনাকে খুব কষ্ট করতে হবে। এর মানে হলো ভ্রমণের বাজেট সঠিকভাবে খরচ করা। বিমান ভাড়া, হোটেল, খাবার এবং ঘোরার খরচ – এই চারটি মূল জায়গায় খরচ কমানো গেলেই বাজেট ট্রিপ সম্ভব। আর এর জন্য দরকার একটু চিন্তা-ভাবনা এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার।

চলুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের প্রতিবেশী ও কাছাকাছি এমন কিছু দেশ সম্পর্কে যেখানে আপনি কম খরচে দারুণ একটি ট্রিপ সেরে ফেলতে পারবেন।

ভারত

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে সহজে এবং কম খরচে ভ্রমণ করা যায় যে দেশে, সেটি হলো আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। বাংলাদেশের প্রায় পুরো জায়গাটা ঘিরেই ভারতের সীমান্ত থাকার কারণে বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে ভারত সবসময়ই জনপ্রিয়। কলকাতা ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে কম খরচে ভ্রমণ করা যায়।

কম খরচে ভারতে একটি ট্যুর দিতে চাইলে যেসব বিষয় জানতে হবে এবং যেসব ধাপ অতিক্রম করতে হবে সেগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভিসা প্রক্রিয়া

ভারতে ঘুরতে যেতে চাইলে আগেই ট্রাভেল ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। অনলাইন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (পাসপোর্ট, ছবি, আইডি কার্ড, ঠিকানার প্রমাণপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, NOC, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে নিকাহনামা ইত্যাদি) সহ ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে জমা দিতে হয়। ট্যুরিস্ট ভিসার খরচ সাধারণত ১,০০০ থেকে ২,০০০ টাকার মধ্যে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে কমবেশি হতে পারে।

যাতায়াতের মাধ্যম

ভারত ভ্রমণের সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায় হলো বাসে বা ট্রেনে যাওয়া। ঢাকা থেকে কলকাতা বা ত্রিপুরার আগরতলার মতো শহরগুলোতে সরাসরি এসি ও নন-এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া সাধারণত ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে থাকে।

যারা ট্রেনে যেতে চান, তারা ঢাকা থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেসে কলকাতা যেতে পারেন। ভাড়া ট্রেনের কোচভেদে ২০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা হয়ে থাকে। এছাড়াও, ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব কম হওয়ায় বাজেট এয়ারলাইনগুলোতে আগে থেকে টিকিট কাটলে তুলনামূলক কম খরচে (৪,০০০-১০,০০০ টাকা ওয়ানওয়ে) বিমানেও যাওয়া সম্ভব।

থাকা-খাওয়া

ভারতের ছোট শহরগুলোতে থাকার খরচ অনেক কম। কলকাতা বা অন্যান্য বড় শহরেও বাজেট হোটেল, গেস্ট হাউজ বা হোস্টেলে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকায় সহজেই থাকা যায়। খাবারের খরচ বাঁচানোর জন্য স্থানীয় ধাবা বা ছোট রেস্তোরাঁগুলোতে খেতে পারেন। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়।

তবে, ভারত ঘুরতে গেলে কলকাতা বা অন্যান্য শহর থেকে স্ট্রিট ফুড খেতে ভুলবেন না যেন।

নেপাল

পাহাড়প্রেমীদের জন্য নেপাল একটি অসাধারণ দেশ। বাংলাদেশীদের জন্য নেপালের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো পোর্ট অফ এন্ট্রিতে ভিসা অন অ্যারাইভাল ব্যবস্থা। স্বল্প খরচে পাহাড় সহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই দেশটিতে ঘুরে আসতে পারবেন। কী কী ধাপ অতিক্রম করতে হবে তা নিম্নরূপ।

ভিসা প্রক্রিয়া

বাংলাদেশীরা নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা স্থলবন্দরে পৌঁছানোর পর ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। ১৫ দিনের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার জন্য ফি প্রায় ৩০ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩,৫০০ টাকার মাঝে নেপাল যাওয়ার জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।

যাতায়াতের মাধ্যম

ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু সরাসরি বাসে যাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। কারণ এর জন্য ভারত হয়ে যেতে হয়। তাই সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং জনপ্রিয় উপায় হলো আকাশপথে ভ্রমণ। ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর ফ্লাইট টিকিট বাজেট এয়ারলাইনগুলোতে আগে থেকে কিনলে ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেতে পারে।

থাকা-খাওয়া

কাঠমান্ডুর থামেল এলাকাটি পর্যটকদের কাছে খুব পরিচিত। এখানে অনেক বাজেট হোটেল, হোস্টেল এবং গেস্ট হাউজ রয়েছে। প্রতিদিন ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকায় থাকা সম্ভব। খাবারের জন্য স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে নেপালি খাবার যেমন ডাল ভাত, মোমো, বা থুকপা খুবই কম দামে পাওয়া যায়। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকার মাঝে একজন ব্যক্তির খাওয়ার খরচ হয়ে যাবে।

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডের দেশটি পর্যটকদের সর্বদাই আকর্ষণ করে এসেছে। ব্যতিক্রম হয়নি আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই থাইল্যান্ড যেতে চান ঘুরতে। কিন্তু, অনেকের মনেই চিন্তা যে, থাইল্যান্ড ভ্রমণ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আদতে, সঠিকভাবে বাজেট নির্ধারণ করে খরচ করলে অল্প খরচেই থাইল্যান্ড ভ্রমণ করা সম্ভব।

থাইল্যান্ড যেতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। ভিসা আবেদন করার পর ফ্লাইট বা অন্য মাধ্যমে থাইল্যান্ড গিয়ে দেশটি ভ্রমণ করতে পারবেন। বিস্তারিত নিম্নরূপ।

ভিসা প্রক্রিয়া

থাইল্যান্ডে ভ্রমণের জন্য ভিজিট ভিসার প্রয়োজন হয়। ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন ঢাকার থাই অ্যাম্বাসি বা VFS Global ভিসা সেন্টার থেকে করতে হয়। ভিসার খরচ প্রায় ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা। ভিসা আবেদন পত্র পূরণ করে যথাযথ ডকুমেন্ট সহ জমা দিয়ে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। 

যাতায়াতের মাধ্যম

ঢাকা থেকে ব্যাংকক সরাসরি ফ্লাইট চলাচল করে। এটি থাইল্যান্ড পৌঁছানোর সবচেয়ে দ্রুততম উপায়। বাজেট এয়ারলাইনগুলোতে অনেক আগে থেকে টিকিট বুক করলে ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকার মধ্যে রাউন্ড ট্রিপ টিকিট পাওয়া যেতে পারে।

থাকা-খাওয়া

ব্যাংককের খাওসান রোড এলাকাটি বাজেট পর্যটকদের জন্য খুব পরিচিত। এখানে অনেক হোস্টেল, গেস্ট হাউজ এবং বাজেট হোটেল রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় থাকা যায়। থাইল্যান্ড স্ট্রিট ফুডের জন্য বিখ্যাত এবং অবিশ্বাস্য রকমের সস্তা ও সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায় এখানে। প্রতিদিন ১০০০ থেকে ২০০০ টাকায় খাবার খাওয়া সম্ভব। 

এছাড়াও, থাইল্যান্ডের রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের কাপড় কিনতে পাওয়া যায়। থাইল্যান্ড ভ্রমণ গেলে অনেকেই রাস্তার পাশে থেকে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। 

ভারত, নেপাল এবং থাইল্যান্ড ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে খুব কম খরচে ভ্রমণ করা যায়। আপনার যদি বাজেটে স্বল্পতা থাকে, তাহলে ৫ দিন থেকে ৭ দিনের একটি ট্যুর দিতে পারেন এসব দেশে। সঠিকভাবে বাজেটে থাকা টাকা খরচ করলে এসব দেশ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। 

শেষ কথা

বাংলাদেশ থেকে কম খরচে কোন দেশে ট্যুরে যাওয়া যায় তা নিয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত গাইডলাইন শেয়ার করা হয়েছে। যারা অল্প টাকায় বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতে চান, তারা পোস্টে উল্লিখিত দেশগুলোর কথা বিবেচনা করতে পারেন। এছাড়া, যেকোনো প্রশ্ন থাকলে নিচের প্রশ্নোত্তর সেকশন দেখুন। 

FAQ

বাংলাদেশ থেকে কোন দেশে যাওয়া সহজ?

বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং মায়ানমার এবং ইন্দোনেশিয়া যাওয়া সহজ। 

বাংলাদেশের জন্য কতটি দেশ ভিসা ফ্রি?

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ৪১টি দেশে পাসপোর্ট দিয়ে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়। 

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ভিসা পেতে কতদিন লাগে?

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ভিসা পেতে ১৫ দিন থেকে ৩০ দিন সময় লেগে থাকে।

বাংলাদেশ থেকে ভারতের ভিজিট ভিসা পেতে কতদিন লাগে?

বাংলাদেশ থেকে ভারতের ভিজিট ভিসা পেতে ৭ দিন থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।

ইউরোপের সবচেয়ে কম খরচে ভ্রমণের দেশ কোনটি?

বুলগেরিয়া ইউরোপের সবথেকে কম খরচে ভ্রমণ করার দেশ। অল্প বাজেটেই ইউরোপের এই সুন্দর দেশটি থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *